ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫,
সময়: ০৭:৩৩:১৭ PM

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত,যেকোনো দিন প্রকাশ

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
30-07-2025 09:31:51 PM
জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত,যেকোনো দিন প্রকাশ

জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার। ইতোমধ্যেই খসড়ার একটি কপি প্রধান তিনটি রাজৈনতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পাঠানো হয়েছে তাদের মতামত দেওয়ার জন‍্য। ইতোমধ‍্যে বিএনপি ও এনসিপি তাদের মতামত যুক্ত করে সরকারকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর জামায়াত আগামী ২-১ দিনের মধ‍্যে তাদের মতামত পাঠাবে বলে জানা গেছে। সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘আগস্টের ৫ তারিখের মধ‍্যে যে কোনো দিন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটি প্রকাশ করবেন’। যেকোনও ধরেনর বিতর্ক এড়াতে অত‍্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে প্রণীত, খসড়া ঘোষণাপত্রে ২৬ দফা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়েছে। ঘোষণাপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা আসার পর টানা তিন মেয়াদের ১৫ বছরের শাসনামলে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধীদলগুলোর সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। 

বিএনপির মতামতের ভিত্তিতে পচাত্তরের ৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লব, ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

তিনটি দলকে ঘোষণাপত্রের খসড়া দিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করতে বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। প্রথম খসড়ায় বলা হয়েছিল, অভ্যুত্থানের চেতনায় দেশ গড়তে সংবিধানকে বাতিল বা সংশোধন করা হবে। তবে, চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, মানবিক ও নাগরিক অধিকার সম্মুত রাখতে সংবিধান সংস্কার করা হবে। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন, আওয়ামী লীগের গুম-খুন-দুর্নীতির বিচারের অঙ্গীকার রয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ‍্য দিয়ে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে ঘোষণাপত্রে কোনও রাজৈনতিক দল কিংবা ব্যক্তির নাম নেই।

বিএনপি আগেই জানিয়েছে, জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের চতুর্থ তফশিলে যুক্ত করা যেতে পারে। তবে, পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি প্যারা অথবা আংশিক উল্লেখ করা যেতে পারে। 

কিন্তু এনসিপি চায়, সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি রাখতে। পুরো ঘোষণাপত্রই সংবিধানে রাখার পক্ষে তারা। জামায়াত নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও, জুলাই অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতির পক্ষে। 

বিএনপি বিরোধিতা করে বলেছে, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ ছিল না ২০১১ সাল পর্যন্ত। ওই বছর সপ্তম তফসিলে তা যুক্ত করা হয়। যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা হয়েছে। তাই জুলাই ঘোষণাপত্রও আলাদা করে সংবিধানে যোগ করা অপ্রয়োজনীয়। বিএনপি এ অবস্থান নিলেও, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকবে।

বিএনিপর স্থায়ী কমিটির সদস‍্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা জুলাইয়ের ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবো। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে তার বর্ণনা থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থান ২০২৪–এর গুরুত্ব, মর্যাদা, মহিমা ধারণ করি। আমরা এটাকে স্বীকৃতি দিই, জাতি এটাকে স্বীকৃতি দেয়। এটাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চাই। 

খসড়া ঘোষণাপত্রটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো

যেহেতু এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে জাতীয় মুক্তির জন্য রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল; 

যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে; 

যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের পদ্ধতি, কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল;

যেহেতু স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহী জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয়;

যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়; 

যেহেতু দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ এর ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়; 

যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়; 

যেহেতু বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে; 

যেহেতু, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে; 

যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে; 

যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ১৬ বছর ধরে নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়; 

যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে; 

যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসীবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে; 

যেহেতু, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারি চাকরিতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকরি প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়; 

যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সব বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়; 

যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ফ্যাসীবাদী আওয়ামী সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলশ্রুতিতে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়; 

যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সব স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসীবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় দুই সহস্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে; 

যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;

যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; 
 
যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী তৎপরবর্তিতে অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়; 

যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়; 

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদি শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যয় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; 
 
সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; 

সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে; 

বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষত, যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের প্রস্তাবনায় এর উল্লেখ থাকবে এবং তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে; 

এ ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট, ২০২৪ সাল থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে। 

গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান হওয়ার পর ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার ঘোষণা দিয়েছিল অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা। এর আগের রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রনেতাদের ডেকে জানান, ঐক্যের স্বার্থে সরকার অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সবদলকে নিয়ে ঘোষণাপত্র তৈরি করবে এবং জারি করবে। 

জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে গত ৮ মে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করে এনসিপি। এতে যোগ দেয় ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, জামায়াত, খেলাফত মজলিসসহ আরও কয়েকটি দল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মে রাতে যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে। এ জন্য পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়াটি পেয়েছি। সেখানে আমাদের মতামত যুক্ত করে আগামী ২-১ দিনের মধ‍্যে সরকারকে পাঠাবো। 

আর এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার আমাদের একটি জুলাই ঘোষণাপত্র দিয়েছিল, সেখানে আমাদের মতামত যুক্ত করে দিয়েছি।