
ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদের দেয়াল থাকবে না মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এ দেশেই জন্মগ্রহণ করেছি। জন্মসূত্রে আমরা দেশের মর্যাদাবান নাগরিক। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান—এই চার ধর্মের অনুসারীদের মিলেই এ বাংলাদেশ। সকল ধর্মের মানুষ নিয়ে মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।গতকাল সোমবার বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকল ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আপনারা অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ৫ আগস্টের পর আমাদের কী হবে, আমাদের আপনারা পাননি, ৫ আগস্টের পরে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানরাও আমাকে পায়নি। এটা আমি আমার কথা বলছি না, আমাদের কথা বলতেছি। আমাদের স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে দেওয়া হয়নি।আমি চোর, ডাকাত, দখলদার ও চাঁদাবাজ নই, আমি খুনি কিংবা সন্ত্রাসও নই। আমাকে কেন কয়েকবার জেলে রাখা হলো? এটা শুধু আমার ব্যাপারে না; এই ধরনের ঘটনা লাখ লাখ মানুষেরও রয়েছে। আমাদের সমাজের মানুষের সুখ, দুঃখ, ব্যথা, বেদনার অংশীদার হতে দেওয়া হয়নি। তারপরও যেখানে খবর পেয়েছি, সারা দেশে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।শফিকুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে বরগুনায় পঞ্চম শ্রেণির একটি মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা থানায় মামলা করেছিলেন। লম্পটরা কেন মামলা করল শুধু এ কারণেই তার বাপকে খুন করা হলো। আপনাদেরই সম্প্রদায়ের একজন অতি সাধারণ মানুষ। মোরগ বিক্রির দোকানে তিনি চাকরি করতেন, এই দিয়ে তার ছোট্ট সংসারটি চলতো।
তিনটা মেয়ের মধ্যে এই মেয়েটি বড়, এরপরের দুইটা এর চেয়েও ছোট। কোলের শিশুটির বয়স আড়াই মাস। আমি সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাদের পাশে কে কে দাঁড়িয়েছেন। তারা বললেন—ডিসি সাহেব মানুষ পাঠিয়েছেন ১০ হাজার টাকা আমাদের দিয়ে গেছে। বলেছিলাম—আর কিছু কি তারা বলেছে, তিনি বললেন—মামলাটা চলবে, তারা দেখবেন এটা। জিজ্ঞেস করলাম—এখন আপনারা চলবেন কীভাবে? তিনি বললেন—যিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র অভিভাবক তিনি মারা গেছেন, এই পরিবারের এখন আর কোনো পুরুষ নেই। তার স্ত্রী বিধবা আর তিনটা এতিম মেয়ে। মহিলাটি তখন কেঁদে কেঁদে প্রায় বেহুশ হওয়ার উপক্রম। সে হাউ মাউ করে খেতে বলল—আমরা বাঁচবো কী করে, কী খাব? কে আমাদের খাবার দেবে, আমাদের সংসারের একমাত্র বাতি সে তো নিভেই গেল। আমি তখন আড়াই মাসের বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলেছিলাম—এই বাচ্চার দায় দায়িত্ব আমি নিলাম। আমাদের সংগঠন আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রতি মাসে তার আর্থিক ভরণ-পোষণ দিয়ে যাচ্ছি।
আরো পড়ুন
অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কেন্দুয়া বাস স্ট্যান্ডে সেনাবাহিনীর অভিযান
অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কেন্দুয়া বাস স্ট্যান্ডে সেনাবাহিনীর অভিযান
বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের আমির এমাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আব্দুল বাছিতের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন—জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, মৌলভীবাজার-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ঢাকার পল্টন থানা আমির শাহিন আহমদ খান। এ ছাড়া উপজেলা নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ আল মাফুজ সুমন, উপজেলা কর্ম পরিষদ সদস্য আব্দুল মুহাইমিন ও মো. কামাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন—বড়লেখা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রনজিত কুমার পাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী, সহ-সাধারণ সম্পাদক গীতেশ চন্দ্র দাস, কোষাধ্যক্ষ মুক্তাসান বিশ্বাস ও হ্যাডম্যান কেমেডি সুমের। অনুষ্ঠান শেষে ডা শফিকুর রহমান সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।