সরকারি জমি, পূজা মণ্ডপ ও খেলার মাঠ দখল করে “সেবা গ্রীন মডেল ফিলিং অ্যান্ড অটো গ্যাস স্টেশন” নির্মাণসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক কে. এম. মাসুদুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তের আবেদন করা হয়েছে।বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে কমান্ডার রবিউল আলম স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, কে. এম. মাসুদুর রহমান সরকারি সম্পদ দখল, মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার, ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
অভিযোগে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার মহেশপুর ইউনিয়নের ব্যাসপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রাজধানীর উত্তরা নিকুঞ্জে “সেবা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর” নামে একটি দোকান খোলার মাধ্যমে তার অপরাধজগতের সূচনা করেন। ওই দোকানের আড়ালে তিনি ফেন্সিডিল, বিয়ার, মদ, গাঁজা ও হেরোইনের ব্যবসা চালাতেন।
এছাড়া, লক্ষ্মীপুরের রফিক উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির রিক্রুটিং লাইসেন্স (ফ্লাওয়ার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল) ব্যবহার করে আদম ব্যবসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতি করেন মাসুদ। এই ঘটনার পর রফিক উল্লাহ মানসিক চাপে ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান। পরে তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকেই মাসুদ নারী ও শিশু পাচার এবং স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাসুদ স্বেচ্ছাসেবকলীগের কিছু নেতার সহযোগিতায় সংগঠনে প্রভাব বিস্তার করেন এবং অর্থ সম্পাদক পদে আসীন হন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সেলিনা খাতুন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোল্যা কাওছার ও পঙ্কজ দেবনাথকে ব্যবহার করে সংগঠনের পদ ও প্রভাব অর্জন করেন।
পরবর্তীতে কাওছার মোল্লাকে পার্টনার বানিয়ে “সেবা গ্রীন লাইন পরিবহন” নামে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন, যেখানে অভিযোগ অনুযায়ী ইয়াবা ও গাঁজাসহ নানা মাদক পাচারের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সাবেক স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব সিরাজুল হক খান মাসুদের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে জড়িত। তিনি সচিব থাকা অবস্থায় বিদেশি দুটি ফান্ড থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তা মাসুদের মাধ্যমে পাচার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনিও “সেবা ফিলিং স্টেশন”সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাসুদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে সরকারি জমি, শিশুদের খেলার মাঠ ও পূজা মণ্ডপের জায়গা দখল করে মাসুদ ও তার সহযোগীরা “সেবা ফিলিং স্টেশন” ও “হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট” নির্মাণ করছে। একইভাবে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সরকারি জমিতেও অবৈধভাবে ফিলিং ও সিএনজি স্টেশন গড়ে তোলা হয়েছে।
এছাড়া গাজীপুরের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিমে ফিরোজ আলী নামক স্থানে প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর “মাসুদ স্টিল ডিজাইন বিডি লিমিটেড” নামে বিশাল শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম মোল্লা ১০ কোটি টাকা চাঁদা ও শেয়ারের বিনিময়ে মাসুদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
অভিযোগপত্রে প্রশ্ন তোলা হয়েছে — মাসুদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ ও সংবাদ প্রকাশের পরও কেন এখনো কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কি তাহলে দুর্নীতিবাজদের প্রভাবে জিম্মি? — এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মনে।
সংবাদ সংক্ষেপে:
-
অভিযুক্ত: কে. এম. মাসুদুর রহমান (সাবেক অর্থ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবকলীগ)
-
অভিযোগ: সরকারি জমি, পূজা মণ্ডপ, মাঠ দখল, দুর্নীতি, চোরাচালান, পাচার, অবৈধ সম্পদ অর্জন
-
সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত: সাবেক সচিব সিরাজুল হক খান, বিএনপি নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম
-
আবেদনকারী: কমান্ডার রবিউল আলম (বীর মুক্তিযোদ্ধা)
-
তদন্তকারী সংস্থা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)