নীল আর কলি—দু’জনার বন্ধুত্ব যেন ছিল আলাদা এক আশ্রয়। স্কুলজীবনের শেষদিকে যখন পড়াশোনার চাপ, ভবিষ্যতের উদ্বেগ আর নিজের মতো জায়গা খুঁজে ফেরার সময়—তখনই একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে তারা বুঝতে পেরেছিল, বন্ধুত্ব কখন যে প্রেমের কোমল রূপ নেয়, তা টের পাওয়া যায় না।
২০২৪ সালের শুরুর দিকেই তাদের বন্ধুত্বে অন্যরকম উষ্ণতা এসে গিয়েছিল। দিনে কতটা পড়া হলো, পরীক্ষার প্রস্তুতি কোথায় আটকে আছে—এই সব সাধারণ আলাপের মাঝেই লুকিয়ে ছিল গভীর টান। নীলের হাসি শুনলে কলির মন শান্ত হয়ে যেত, আর কলির ছোট ছোট কৌতুক নীলকে সারাদিন ভালো রাখতে পারত। কখনও কেউ প্রকাশ করেনি কথা দিয়ে, কিন্তু দু'জনেই জানত—বন্ধুত্বের ওপরে কোনো এক নরম অনুভূতি জন্মেছে তাদের মাঝে।
কলির মনে এখনো ভাসে সেই বিকেলগুলোর কথা—যখন তারা লাইব্রেরির সামনে বসে বই নিয়ে আলোচনা করত। কথার মধ্যেই নীল কখনো হঠাৎ চুপ হয়ে যেত, কলির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসত। কলির বুক ধুকপুক করে উঠত, কিন্তু তার ভাষা পেত না। এভাবেই দিন চলছিল—নিশ্চিন্ত, স্বচ্ছ, সরল।
কিন্তু জীবন সবদিন একই সুরে বাজে না। একদিন হঠাৎ করে কলি খেয়াল করল—নীল যেন একটু দূরে সরে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো পরীক্ষা সামনে, পড়াশোনার চাপ। কিন্তু যে নীল দিনে দশবার মেসেজ করত, সে এখন একবার উত্তর দিতেও সময় নিচ্ছে। ফোন করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে দিত। কখনও বলত, “পরে কথা বলি।”
গভীরে কোথাও কলি বুঝেছিল—কিছু একটা বদলে যাচ্ছে। কিন্তু তখনও সে নিজেকে সান্ত্বনা দিত, ‘‘না, নীল এমন নয়। এতদিনের সম্পর্ক সে ভুলে যাবে নাকি? নিশ্চয় কোন সমস্যা হয়েছে ওর।’’
কলি তার কষ্ট নীলকে বুঝতে দিতে চায়নি। তার বিশ্বাস ছিল—สัมพันธ์ যদি সত্যি হয়, তবে একটা ছোট দূরত্ব এদের ভাঙতে পারবে না। তবুও রাত জেগে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার হৃদয়ে যে সামান্য ব্যথা জমছিল, তা সে কারও সাথে শেয়ার করতে পারত না।
দিন কেটে যাচ্ছিল, নীলের উদাসীনতা আরও বাড়ছিল। কিছুদিন এভাবে চলার পর কলিও আর খোঁজ করার আগ্রহ দেখাল না। তবুও মন তো থামানো যায় না—হাজার প্রশ্ন ছুটে বেড়াতে থাকে মাথায়। ‘‘নীলের কী হলো? কেন এমন আচরণ করছে?’’
এক বিকেলে ঘটনা নিজে থেকেই ধরা পড়ে কলির চোখে।
সেদিন আকাশে একটু মেঘ, পুকুরপাড়ে নরম বাতাস বইছিল। ক্লাস শেষে কলি ধীরে ধীরে হাঁটছিল বাড়ির দিকে। হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় পুকুরের বাঁধের দিকে। সেখানে, কাঁঠাল গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নীল—আর তার সামনে এক মেয়ে। মেয়েটা চেনে কলি, বিভাগের জুনিয়র—সুমা।
দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল, তারা হাসছে, গল্প করছে, আর নীলের চোখে সেই পুরনো উজ্জ্বলতা—যা কলির সঙ্গে কথায় দেখা যেত।
কলির পা যেন হঠাৎ থেমে যায়। তার নিঃশ্বাস আটকে আসে। বিশ্বাস করতে পারছিল না—নীল, যে তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেছে, সে এখন অন্য কাউকে নিয়ে হাসছে?
মুহূর্তের মধ্যে হাজার ঝড় এসে পড়ে তার ভেতরে।
হয়তো কিছুক্ষণের জন্যই সুমার সঙ্গে দেখা, হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলাপ—নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে কলি। কিন্তু চোখে যা দেখে, হৃদয় তা মানতে চায় না।
এই সময় নীল হঠাৎ তাকে দেখতে পায়। চমকে ওঠে, চোখ বড় হয়ে যায়। এক সেকেন্ডের জন্য অপরাধবোধের মতো কিছু তার চোখে ফুটে ওঠে, কিন্তু বিস্ময়ের সেই মুহূর্তের পরই নীল নিজেকে সামলে ফেলে। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কলিকে অভিবাদন জানায়, যেন কিছুই হয়নি।
কলি স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মুখে হাসি থাকলেও হৃদয়ে যেন তীব্র ব্যথা ঢেউ খেলে যায়। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলে ওঠে,
— “কেমন আছ নীল?”
নীলও স্বাভাবিক সুরে জবাব দেয়,
— “ভাল… তুমি?”
দু’জনার কথাবার্তা ছিল খুবই সাধারণ, নির্লিপ্ত। অথচ সেই সাধারণতাই কলির বুকের ভেতরে কাঁপন তুলে দেয়। কথাগুলো শেষ হতেই কলি আর সেখানে দাঁড়াতে পারে না। ঘুরে হাঁটতে শুরু করে, কিন্তু প্রতিটা পা যেন ভার হয়ে আসে।
পেছন ফিরে দেখে—নীল আবার সুমার দিকে তাকাচ্ছে।
হাওয়ায় গাছের পাতা নড়ে, কিন্তু কলির মনে কোনো শব্দ নেই। শুধু নিঃশব্দ এক শূন্যতা।
পুকুরের ঘোলা জলে নিজের মুখ দেখলে যেমন অস্পষ্ট লাগে, ঠিক তেমনই অস্পষ্ট হয়ে যায় তার নিজের অনুভূতিগুলো। বাস্তব আর স্মৃতি যেন গুলিয়ে যেতে থাকে।
এতদিনের সম্পর্ক কি সত্যিই এত সহজে বদলে যায়?
নীল কি সত্যিই অন্য কারও জন্য দূরে সরে গেছে?
নাকি এর পেছনে আরও গভীর কোনো কারণ আছে?
এই প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে, বুকভরা অনিশ্চয়তা নিয়ে কলি পুকুরপাড় ছেড়ে চলে আসে।
তার অজান্তেই শুরু হয়ে যায় এক নতুন অধ্যায়—ব্যথা, সন্দেহ, সত্য অন্বেষণ আর নিজেকে চিনে নেওয়ার অধ্যায়।
**উপন্যাস – দ্বিতীয় পর্ব
অপ্রকাশিত সত্য
পুকুরপাড়ের সেই দিনের পর কলি আর নীলের মাঝে দূরত্ব যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাইরে থেকে সব শান্ত, কিন্তু ভেতরে ভেতরে চলছিল সংগ্রাম—দু’জনেরই। কলি যে চুপ করে চলে এসেছে, তা নীল বুঝেছিল; কিন্তু কলিকে থামিয়ে কী বলবে, তা সে জানত না।
কিন্তু নীলের দৃষ্টিটা অন্যরকম।
**১
নীলের ভেতরের গল্প**
কয়েক মাস আগেও নীলের জীবন ছিল স্বাভাবিক। পড়াশোনা, বাড়ির দায়িত্ব আর কলির সঙ্গে প্রতিদিনের হওয়া কথা—সবকিছুই তাকে স্থির রাখত। কলি শুধু তার বন্ধু বা প্রেমিকা নয়, নীলের মানসিক শক্তিও ছিল।
কিন্তু নীলের বাড়ির ভেতরের অশান্তি কলি কোনোদিন জানত না। তার বাবার হঠাৎ চাকরি হারানো, বাড়ির উপর ঋণের চাপ, ছোট বোনের চিকিৎসা—সব মিলিয়ে নীলের কাঁধে অচেনা ভার এসে পড়ে।
নীল চেয়েছিল কলিকে সব জানাতে। কিন্তু যখনই কলির হাসিমাখা মুখ দেখে, তার মনে হতো—কলিকে এই দুঃশ্চিন্তা দিয়ে দেবে? তার নিশ্চিন্ত জগতের মধ্যে কেন অস্থিরতা ছড়াবে?
সেই থেকেই সে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে শুরু করে।
কলি ভাবছিল—এটা বদল।
কিন্তু নীল জানত—এটা আত্মরক্ষার চেষ্টা।
সে ভেবেছিল,
“যদি একদিন আমি ভেঙে পড়ি, কলিও ভেঙে যাবে। তার চেয়ে দূরে থাকাই ভালো।”
কিন্তু দূরে থাকা যে এত কষ্টের, তা নীল নিজেও বুঝতে পারেনি।
**২
সুমার উপস্থিতি**
সুমা নীলের ক্লাসের জুনিয়র। দু'মাস আগে একদিন লাইব্রেরিতে হঠাৎই তার সঙ্গে আলাপ হয়। সুমা মেধাবী, কিন্তু পরিবার থেকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিল। একাধিকবার আত্নসম্মানবোধে আঘাত পেয়ে ভেঙে পড়েছিল সে।
নীল তাকে পড়াশোনার কিছু সাহায্য করেছিল মাত্র—কিন্তু সুমা ধীরে ধীরে নীলকে নিজের ভরসার জায়গা মনে করতে শুরু করে।
নীল কাউকে ভুলিয়ে নতুন সম্পর্ক করতে চায়নি। বরং সুমাকে সে কলির মতোই একজন সহপাঠী হিসেবে দেখত। কিন্তু জীবনের চাপ আর নিজের ভেতরের অস্থিরতার কারণে নীল বুঝতে পারেনি—সুমা অনেকটাই নির্ভর করে ফেলেছে তার ওপর।
সেই পুকুরপাড়ের দিন সুমা কান্না করছিল—বাড়িতে বড় সমস্যা হয়েছে। নীল দিশেহারা হয়ে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। ঠিক তখনই কলি এসে পড়ে।
কলিকে দেখেই নীলের মনে হয়েছিল—সবকিছু ব্যাখ্যা করবে। কিন্তু সুমা পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “স্যার, আমরা কি যাই?”
নীল থমকে যায়। এক মুহূর্তেই পরিস্থিতি বদলে যায়।
ব্যাখ্যা করার সুযোগও হারিয়ে যায়।
**৩
কলির নীরবতা**
কলি ঘটনার পর কয়েকদিন নিজেকে সামলে রাখতে চেষ্টা করে। সে নীলকে কোনো অভিযোগ জানায় না, কোনো কথা বলতে জোর করে না। কিন্তু তার মনের ভিতরে তীব্র দ্বন্দ্ব—
“নীলের জীবনে কি সত্যিই আর জায়গা নেই আমার?”
“সে কি সুমার জন্যই দূরে গেল?”
একদিকে আঘাত, অন্যদিকে সন্দেহ—এই দুই আগুনে কলি নিঃশব্দে দগ্ধ হতে থাকে।
তবুও সে নিজেকে শক্ত রাখে।
কারণ সে জানে—ভালোবাসা কখনো জোর করে ধরে রাখা যায় না।
**৪
অপ্রত্যাশিত বার্তা**
এক রাতে নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নেয়। অনেকদিন পর কলির নামের পাশে সবুজ লাইট জ্বলছে। কতদিন আশা করেছিল—এভাবে কথা বলতে পারবে।
নীল বার্তা লেখে—
“কলি, কথা বলতে পারবে?”
বার্তাটি সেন্ড করে। কিন্তু কলির উত্তর আসে না অনেকক্ষণ।
নীলের বুকের ভেতর অস্থিরতা বাড়তে থাকে।
কিছুক্ষণ পর ফোনে ভেসে ওঠে—
“কাল দেখা হবে। পুকুরপাড়ে।”
নীল কয়েক সেকেন্ড শুধু তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনের দিকে।
কলি তাকে ডেকেছে।
অবশেষে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার সময় এসেছে।
**৫
কলির দৃঢ় সিদ্ধান্ত**
অন্যদিকে কলি সেই বার্তা পাঠানোর পর জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। রাতের অন্ধকারে তার চোখেও একটা দৃঢ়তা—
সে জানে, আগামী দিনের সেই দেখা—
স্রেফ দেখা নয়,
বরং সম্পর্কটা বাঁচবে কি ভেঙে যাবে—তার সিদ্ধান্তের মুহূর্ত।
**উপন্যাস – তৃতীয় পর্ব
সময়ের মুখোমুখি
পুকুরপাড়ে সন্ধ্যার আলো ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছিল। আকাশে মিশে থাকা শেষ রঙগুলো নেমে আসছিল জলে, আর বাতাসে ছিল ঠান্ডা কুয়াশার স্পর্শ। জায়গাটা পরিচিত হলেও আজ যেন অচেনা লাগছিল।
কলি আগেই এসে বসেছিল। পা দোলাচ্ছিল না, কানে কোনো গানও ছিল না—শুধু তার মনে চলছিল অস্থির স্রোত। নীল আসবে। তাদের চোখ সরাসরি মিলবে। আর আজ—যাই হোক না কেন—সব প্রশ্নের উত্তর তাকে জানতে হবে।
কিছুক্ষণ পর নীরবে পায়ের শব্দ শোনা গেল।
নীল এগিয়ে এলো ধীরে ধীরে। তার মুখে ক্লান্তি, চোখে অনুশোচনা, আর肩ে যেন অদৃশ্য কোনো ভার।
কলি তাকাল না, কিন্তু অনুভব করল—নীল তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
**১
নীলের প্রথম শব্দ**
নীল বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
— “কলি… আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছিলে। অনেকদিন হলো দূরে আছি, কিন্তু ইচ্ছে করে না… পরিস্থিতি আমাকে এমন করেছে।”
কলি মুখ তুলল।
তার চোখে জলের ছাপ নেই, কিন্তু ভেতরে প্রচণ্ড শক্ত একটা থরথর ভাব।
সে ধীরে জিজ্ঞেস করল,
— “তাহলে আমায় জানালে না কেন? আমি কি এতটাই দূরের মানুষ ছিলাম তোমার কাছে?”
নীল চোখ নামিয়ে নেয়।
— “না, দূরের না… বরং এতটাই কাছের যে তোমাকে ব্যথা দিতে চাইনি।”
কলি মৃদু হাসল—যে হাসি জোর করে রাখা হয়।
— “ব্যথা কি দূরত্বে কমে? নাকি সত্য লুকাতে গিয়ে… আরও বেড়ে যায়?”
নীল উত্তর দিতে পারে না। বাতাস এক মুহূর্ত থমকে থাকে।
**২
নিঃশব্দ সত্য**
কলি এবার সরাসরি বলে ওঠে,
— “সেদিন পুকুরপাড়ে তোমাকে দেখলাম সুমার সঙ্গে। তখনই বুঝলাম—তুমি আমাকে ভুলে যাচ্ছ।”
নীল তৎক্ষণাৎ মাথা তোলে।
— “না, এটা ভুল! কলি, তুমি ভেবেছ আমি সুমাকে… কিন্তু না, ব্যাপারটা অন্যরকম।”
— “তাহলে বল। সত্যটা শুনতে চাই।”
নীল গভীর শ্বাস নিল, তারপর ধীরে সব বলতে শুরু করল—
বাড়ির আর্থিক সংকট, বাবার চাকরি, বোনের চিকিৎসা, দিনরাতের চিন্তা… আর এই সবের ভেতরে কলিকে যুক্ত করতে না চাওয়ার ভুল সিদ্ধান্ত।
কলি বিস্ময়ে, ব্যথায়, আবার কিছুটা বোঝাপড়ায় তাকিয়ে থাকে।
সে নরম সুরে বলে,
— “তুমি যতটা ভেবেছিলে আমাকে দুর্বল, আমি ততটা নই নীল। তুমি যদি বলতেই, আমরা দু’জন মিলে সামলাতে পারতাম।”
নীলের চোখ ভিজে আসে।
— “জানতাম… কিন্তু ভয় পেয়েছিলাম। তোমাকে হারানোর ভয়।”
কলি অসহায়ভাবে বলে,
— “আশ্চর্য তুমি! আমাকে না বলেই আমাকে হারানোর পথ বেছে নিলে!”
নীল এবার সত্যিই স্তব্ধ হয়ে যায়।
**৩
সুমার ভূমিকা**
হঠাৎই দুজনার কথার মাঝখানে পেছন থেকে একটা হালকা কণ্ঠ শোনা যায়।
— “আমি কি একটু কথা বলতে পারি?”
দুজনেই ঘুরে তাকায়।
সুমা দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ লাল, কিন্তু চেহারায় একরকম দৃঢ়তা।
সুমা ধীরে সামনে আসে।
— “আমি কিছুদিন ধরে নীল স্যারের উপর নির্ভর করে ফেলেছিলাম। আমারও অনেক সমস্যা ছিল… তাই কথা বলতাম। কিন্তু আমি ভুল বুঝেছিলাম হয়তো। স্যার কখনো আপনাকে ভুলে যায়নি। বরং আপনাকে কষ্ট দিতে না চেয়েই দূরে গেছে।”
সুমার চোখে সৎ অনুশোচনার ছাপ।
কলি নরম হয়ে যায়।
— “তুমি আমাকে ভুল করিয়েছিলে না। পরিস্থিতি ভুল ছিল।”
নীলও শান্ত স্বরে বলে,
— “সুমা, তোমার সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু আমার নিজের ভুলগুলো আমাকে সারাজীবন তাড়া করবে মনে হয়।”
সুমা মাথা নিচু করে চলে যায়।
তাদের মধ্যে কথা বলার জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়।
**৪
সবচেয়ে বড় মোড়**
কলি কিছুক্ষণ চুপ। নীলও।
পুকুরের জলে বাতির আলো পড়ে কাঁপছে।
অবশেষে কলি বলল,
— “নীল, তোমার সব সত্যই জানলাম। কিন্তু একটা কথা—সত্য জানলেই সব আগের মতো হয়ে যায় না।”
নীলের বুক কেঁপে ওঠে।
— “মানে?”
কলি তার দিকে তাকায়। চোখে জল নেই, কিন্তু আছে নির্মম সত্য।
— “বিশ্বাস ভেঙে গেলে তা আবার জোড়া লাগে, তবে আগের মতো থাকে না। আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না; কিন্তু এখন সময় চাই—নিজেকে বোঝার, সম্পর্কটাকে বোঝার।”
নীল কাঁপা কণ্ঠে বলে,
— “তাহলে কি… আমাদের শেষ?”
কলি মৃদু মাথা নাড়ল।
— “শেষ নয়। কিন্তু—আগের মতোও নয়। হয়তো আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে… দূরত্ব থেকে।”
নীল কিছু বলতে পারে না। তার চোখে কষ্ট, অনুশোচনা আর সামান্য আশা মিশে যায়।
কলি উঠে দাঁড়াল।
— “সময়ই ঠিক করবে নীল… আমরা একসঙ্গে থাকব কি না।”
বলে কলি ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করে।