ঢাকা, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ১১:০৯:৫২ PM

২৫ সাল:- শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্ষতবিক্ষত শিক্ষার্থীরা

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
06-12-2025 09:54:23 PM
২৫ সাল:- শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্ষতবিক্ষত শিক্ষার্থীরা

চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়েছে ১০০ দিনেরও কম। ছুটি, পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষকদের কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সমাবেশের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেনি। পাশাপাশি পাঠ্যবই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার মান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে বছরে মোট ১৮০ দিন বন্ধ থাকে। বাকি ১৮৫ দিনে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে ৩৮ দিন কর্মবিরতি এবং ২৭ দিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় ক্লাসের দিন মাত্র ১১৮। শৈত্যপ্রবাহ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য কারণে আরও ১১ দিন বন্ধ থাকার ফলে কার্যত ক্লাস হয়েছে মাত্র ১০৭ দিন। পাঠ্যবই বিতরণের বিলম্বের কারণে ক্লাসের কার্যকর দিন সংখ্যা ৯০-এর নিচে নেমে এসেছে।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও একই চিত্র। ১৮৫ কর্মদিবসের মধ্যে পরীক্ষা, শিক্ষকদের আন্দোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অনির্ধারিত বন্ধের কারণে শুধুমাত্র ৯৫–১০০ দিনে পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হয়েছে। এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষকদের আন্দোলন ও কর্মবিরতির কারণে বাস্তব ক্লাসের সংখ্যা ৬৫–৭০ দিনের মতো।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি উদ্বেগজনক। অভিভাবকরা সন্তানের পড়াশোনায় ক্ষতির কারণে হতাশ। রাজশাহীর বাঘার আড়ানী মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “স্কুলে ক্লাসের সংখ্যা খুব কম। অধিকাংশ দিন সন্তান শুধুমাত্র হাজিরা নামানোর জন্য স্কুলে যায়। পড়াশোনা হচ্ছে প্রাইভেট টিউশনে।”

শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘমেয়াদি শিখন ঘাটতি দেশের জন্য বড় সংকেত। BRAC বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, “শিক্ষার মান বাড়াতে ক্লাসমুখী পাঠদান অপরিহার্য। পাঠ্যবই বছরের শুরুতেই বিতরণ করতে হবে, শিক্ষককে ক্লাসে ফেরাতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান জানান, প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ও গণিতের ঘাটতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় কাটিয়ে ওঠা কঠিন। ফলে দীর্ঘমেয়াদি শিখন ঘাটতি কর্মজীবনে দক্ষ জনশক্তির অভাবে পরিণত হয়, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অবিলম্বে কর্মবিরতি ও ছুটির কারণে ক্লাস কম হওয়া বন্ধ করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রাপ্য দাবি ও শিক্ষার মান সমন্বয় করতে হবে, নতুবা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বিপন্ন হবে।