অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ পেয়েছেন মনোনয়ন। প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির কোন্দল মিটবে নাকি আরও বাড়বে সে প্রশ্ন সবার। যদিও দলের নেতা কর্মীরা বলছেন দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষেই আমরা কাজ করবো। মনোনয়ন পেয়েই হারুন অর রশীদ ঐকের ডাক দিয়েছেন। ধানের শীষের হয়ে দলের সবাইকে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন। আসনটি ফিরে পেতে বিএনপি যেমন আপ্রাণ চেষ্টা করবে তেমনি জামায়াত ইসলামীও মরণ কামড় দেবে। নির্বাচনে নবগঠিত দল এনসিপিও প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ না নিলেও তাদের বিপুল সংখ্যক ভোটার ফলাফলে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। এ কথা স্বীকার করেছেন প্রতিদ্ব›িদ্ব রাজনৈতিক দলের নেতারা।
পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-২ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী একবার করে জয়লাভ করে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ডা. একেএম আসজাদ জয়লাভ করেন। অবশ্য এরপরের নির্বাচনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী ন্যূনতম প্রতিদ্ব›িদ্বতাও গড়ে তুলতে পারেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী নাসিরুল হক সাবু। অন্য নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রাধান্যই দেখা গেছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবার ভিন্ন একটি পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে। যেখানে আওয়ামী লীগের থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয়ী স্বল্প ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন আওয়ামী জোটের প্রার্থী। বিএনপি সেবার তৃতীয় হলেও বিপুল ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়। এ নির্বাচনে বিএনপি ১০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থী। ২০০৮ সালে গিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। ৫৯ হাজার ভোটের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয় মহাজোটের প্রার্থী জিল্লুল হাকিম। প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের ভোটগুলো কার বাক্সে যাবে? সেগুলো কি ভাগ হয়ে যাবে, নাকি একই দিকে যাবে? এই হিসাব নিকাশে ব্যস্ত প্রার্থীরা।
প্রথম দফায় এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় কানাঘুষা ছিল জোটের শরীকদের আসনটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। দ্বিতীয় দফা ঘোষণায় হারুন অর রশীদ মনোনয়ন পেয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরুল হক সাবু, জেলা বিএনপি আহবায়ক অ্যাড. লিয়াকত আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যরিস্টার কাজী মানিকসহ অন্তত ছয়জন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছিল হারুন অর রশীদের সাথে নাসিরুল হক সাবুর। আসনটিতে বিএনপি হারুন গ্রæপ ও সাবু গ্রæপে বিভক্ত। বিএনপির কর্মসূচিগুলো দীর্ঘদিন ধরে আলাদা আলাদাভাবে পালিত হয়। হারুন অর রশীদ মনোনয়ন পেয়েই ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বেশ জোড়েশোরে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় কোনো প্রকার আনন্দ মিছিল করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন নেতাকর্মীদের। গণসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন। সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবুর বাড়িতে গিয়েছেন। বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রতিপক্ষ নেতাদের সাথে মিটিং করেছেন একসাথে। এসবটাই দলের নেতাকর্মীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
রাজবাড়ী-২ আসনে গ্রæপিং আছে স্বীকার করে নাসিরুল হক সবুর অনুসারী নেতা পাংশা কলেজের সাবেক ভিপি হাবিবুর রহমান রাজা বলেন, দল থেকে হারুন অর রশীদকে যেহেতু নমিনেশন দেওয়া হয়েছে তিনি ঐক্যের ডাক দেবেন এটাই স্বাভাবিক। যাদের নেতৃত্বে আমরা রাজনীতি করি, অচিরেই তাদের সবাইকে নিয়ে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। ইউনিটি বজায় রেখে সিদ্ধান্তমোতাবেক কাজ করব।
বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপিতে কোনো কোন্দল নেই। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। এটা সব দলেই থাকে। তিনি মনোনয়ন পেয়ে সবার কাছে যাচ্ছেন। যেসব সমস্যা আছে তা মিটে যাবে। ধানের শীষ সবার আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক। সকলে এক হয়ে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবে- এটাই সত্যি।
রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যাড. লিয়াকত আলী বলেন, আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও তাদের ভোট রয়েছে। তাদের ভোটগুলো কোনদিকে যাবে তা বলা কঠিন। তবে এই ভোট ফলাফলের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থেকে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনব।
আসনটিতে জামায়াত ইসলামী অনেক আগেই তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক পেশায় শিক্ষক হারুন অর রশীদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জামাতের প্রার্থী হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। জয়ের ব্যাপারেও তারা আশাবাদী। এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক রয়েছে একথা স্বীকার করে বলেন, যারা এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও অপকর্ম করেছে ভোটগুলো তাদের বিরুদ্ধে যাবে।
অন্যদিকে এনসিপি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইয়েদ জামিলকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যে তিনি ব্যানার পোস্টার করে মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সুযোগমত গণসংযোগও করছেন। প্রার্থী সাইয়েদ জামিল বলেন, তিনি নির্বাচনের জন্য জোড়েশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে কমিটি করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কাজ চলছে। অনলাইন বেইজ কাজ করছেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলছেন। এ পর্যন্ত তারা যে টেবিল ওয়ার্ক করেছেন তাতে রাজবাড়ী-২ আসনে এনসিপির জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও তাদের ভোট আছে। তাদের ভোট পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ভাসমান ভোট তার পক্ষে থাকবে এমনটাই মনে করেন তিনি।
এছাড়া এনডিএম এ আসনে দলের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোমেনিল মোমিনকে প্রার্থী করতে পারে।