ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ১২:৫২:৫৭ AM

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে ঢাকায় জনস্রোতের অপেক্ষা

মান্নান মারুফ
17-12-2025 10:15:02 PM
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে ঢাকায় জনস্রোতের অপেক্ষা

দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী থেকে গ্রাম—হাটে-বাজারে, চায়ের দোকানে, মহল্লার আড্ডায়—একটাই আলোচনার বিষয়: তারেক রহমানের আগমন। সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে আনন্দ, উৎসাহ আর এক ধরনের প্রত্যাশাময় উত্তেজনা। অনেকের চোখে এই প্রত্যাবর্তন কেবল একজন রাজনৈতিক নেতার ফিরে আসা নয়, বরং দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলীয় অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, ওইদিন ঢাকার রাজপথে মানুষের ঢল নামতে পারে, যা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় রাজনৈতিক সমাবেশে রূপ নিতে পারে। ঢাকার আকাশ-বাতাসে যেন আগে থেকেই এক ভিন্ন রাজনৈতিক আবহ টের পাওয়া যাচ্ছে।

বিএনপির একাধিক নেতা ও কর্মীর দাবি, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে কয়েক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রাজধানীতে উপস্থিত হতে পারেন। নয়া পল্টন, কাকরাইল, মতিঝিলসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মানুষের চাপ এতটাই বাড়তে পারে যে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই জনসমাগমকে আরও বিস্তৃত ও প্রাণবন্ত করে তুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দলীয় সূত্র জানায়, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক হয়ে নয়া পল্টন পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো হতে পারে। শুধু ঢাকা শহর নয়—দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় শহর থেকেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ নিজ নিজ উদ্যোগে, নিজ খরচে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করছেন—দীর্ঘদিন পর তারেক রহমানকে এক নজর দেখার আশায়।

বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, টানা ১৮ বছরের রাজনৈতিক নির্বাসন তারেক রহমানের রাজনৈতিক অবস্থানকে একটি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ের অনুপস্থিতি তার প্রতি সমর্থকদের আবেগ ও প্রত্যাশাকে আরও গভীর করেছে। দলের ভেতরে বিশ্বাস জন্মেছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে এবং দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করলেও তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। কখনো সমালোচনা, কখনো সমর্থন—সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন আলোচনার বাইরে নয়। তার অনুপস্থিতি যেমন রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনি সমর্থকদের মধ্যে তৈরি করেছে এক ধরনের অপেক্ষা ও কৌতূহল। সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে ২৫ ডিসেম্বর—এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই স্বাগত আয়োজনের জন্য দলীয়ভাবে কোনো বড় বা কেন্দ্রীয় বাজেট নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এলাকা ভিত্তিক নেতারা নিজ নিজ সাংগঠনিক ইউনিটের কর্মীদের ঢাকায় আসতে উৎসাহিত করছেন বলে জানা গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় পর্যায়ে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে যাতায়াত ও অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এতে করে এই আয়োজন আরও বেশি জনভিত্তিক ও স্বাভাবিক রূপ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, উত্তেজনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করাই দলের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নিবিড় নজর রাখবে।

এছাড়া তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে পৃথক একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কমিটির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বাগত আয়োজনের সমন্বয়, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা তদারকি।

এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অনেক আগেই বলেছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকায় আসলে তাকে সরকারের পক্ষথেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তার চলাচলের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে সরকারি, বেসরকারি এবং দলীয়ভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

সব মিলিয়ে, ২৫ ডিসেম্বরকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় এক ভিন্ন রাজনৈতিক দৃশ্যপট তৈরি হতে যাচ্ছে। এই দিনটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার প্রত্যাবর্তনের দিন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। ঢাকার রাজপথে ঠিক কত মানুষের সমাগম ঘটবে এবং এই প্রত্যাবর্তন ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে—সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে সময়ের হাত ধরেই।