ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫,
সময়: ০৩:৩৮:০৬ PM

রায়ের আগেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে জয়ের প্রতিক্রিয়া

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
17-11-2025 12:24:03 PM
রায়ের আগেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে  জয়ের প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের ‘পলাতক’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত জুলাইয়ের গণহত্যার মামলায় আগামী সোমবার রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। রায়টি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে।রায়ের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বর্তমানে কর্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। রবিবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, তার মাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে, তবে আপাতত সে নিয়ে তাদের কোনো উদ্বেগ নেই।

গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দেশ ত্যাগ করেন হাসিনা। তারপর থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। জয় জানান, ভারতে তার মা নিরাপদে আছেন, এবং ভারত সরকার তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে।

জয়ের ভাষায়, “রায় কী হতে যাচ্ছে আমরা সবাই জানি। ওরা আমার মাকে দোষী সাব্যস্ত করবে, সম্ভবত মৃত্যুদণ্ডও দেবে। কিন্তু ওরা মায়ের সঙ্গে কী করতে পারবে? তিনি তো ভারতে নিরাপদে আছেন।”


নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ—জয়ের হস্তক্ষেপ দাবি

হাসিনার পদত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞের দায়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। আমাদের আন্দোলন প্রতিদিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে যা প্রয়োজন আমরা তা করব।”

জয়ের দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হস্তক্ষেপ না করলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে সহিংসতা বাড়বে এবং তারা নির্বাচনে বাধা দেবে।

অন্যদিকে, ড. ইউনূস সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং সাম্প্রতিক অশান্তির জন্য দলটির সমর্থকদেরই দায়ী করেছেন তারা।


রায় হলে করণীয় কী?

সরকারের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পলাতক অবস্থায় থাকায় শেখ হাসিনা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন না। নিয়ম অনুযায়ী রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়, তবে এর জন্য তাকে দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে হবে। দেশের বাইরে থেকে পাঠানো কোনো বক্তব্য বা আবেদন আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না।

জয় জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে তারা আপিল করার কথা ভাবছেন না, কারণ তার মা ভারতে নিরাপদে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং নতুন সরকার গঠিত হলে তবেই তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিবেচনা করবেন।


অভিযোগ ও মামলার অগ্রগতি

২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত বাংলাদেশজুড়ে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলন দমাতে তিনি পুলিশকে ছাত্র-যুবকদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই ঘটনাসংশ্লিষ্ট পাঁচটি অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। সরকারপক্ষ তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে।

শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, তিনি কখনো সরাসরি হত্যার নির্দেশ দেননি। তবে আদালত তার এই দাবি গ্রহণ করেনি।

এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযুক্ত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ভারতের আশ্রয়ে আছেন। অন্যদিকে পুলিশের ওই কর্মকর্তা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।