ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ১১:১৪:০১ AM

তফসিল ঘোষণার পরও ব্যানার-পোস্টার:প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
15-12-2025 09:40:21 PM
তফসিল ঘোষণার পরও ব্যানার-পোস্টার:প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থীরা

সারাদেশে নির্বাচনি উত্তাপ তুঙ্গে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একসাথে অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই প্রেক্ষাপটে গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়ন এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সব ধরনের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন এবং প্রচারণামূলক সামগ্রী অপসারণ করতে হবে। কিন্তু রাজধানী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে, জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, ব্যানার ও পোস্টার এখনও চূড়ান্ত প্রভাব বিস্তার করছে। নির্বাচনি স্বচ্ছতা রক্ষা এবং আচরণবিধি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি ইসির সক্ষমতা ও কঠোরতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

মাঠ পর্যবেক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু সময়ের দেরি নয়; বরং এটি নির্বাচনি মাঠে প্রার্থীদের প্রভাব এবং প্রচারণার অমিশ্রিত আধিপত্যের প্রমাণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশ্লেষক জানান, “বৃহৎ প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণার জন্য কর্মীদের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, ‘ব্যানার-পোস্টার কর্মীরা নিজ উদ্যোগে লাগিয়েছে, আমি জানতাম না’, যা প্রকৃতপক্ষে প্রার্থীর অনুমতি ছাড়া সম্ভব নয়।”

রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। প্রভাবশালী ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী প্রার্থীরা নিয়ম ভঙ্গে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাধীন। এর ফলে সমান সুযোগ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

নির্বাচন কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ছাড় পাবে না। মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।” তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু সতর্কবার্তা বা ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আচরণবিধি কার্যকর করা কঠিন।

বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর কিছু এলাকা আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঢাকা-৭, চট্টগ্রাম-৫ ও রাজশাহী-৩ আসনে প্রার্থীরা এখনও ব্যানার ও ফেস্টুন মুছে ফেলেননি। এসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলেও বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, “নির্বাচন মানেই শুধু ভোটের দিন নয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আইন ও আচরণবিধির কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যানার-পোস্টার অপসারণে ব্যর্থ হলে ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণও কঠিন হয়ে যাবে।” তারা আরও সতর্ক করেছেন যে, বড় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কিন্তু ছোট প্রার্থীকে শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হবে।

ইসির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ব্যানার-পোস্টার অপসারণে ব্যর্থ হলে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলের সতর্কতা এবং ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তবে মাঠে এর বাস্তবায়ন কতটা দৃঢ় হবে, সেটি এখনও অনিশ্চিত।

সব মিলিয়ে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি উত্তাপ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, আচরণবিধি বাস্তবায়ন এবং শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনগণের আস্থা নির্ভর করছে কতটা কঠোরভাবে আচরণবিধি বাস্তবায়ন করা হয় তার ওপর। ইসি, প্রশাসন, প্রার্থী ও দলের সমন্বয় কার্যকর না হলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।