ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬,
সময়: ০৩:৫২:০৫ PM

জাতি হারাল এক মহান অভিভাবক: প্রফেসর ইউনূস

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
30-12-2025 11:19:47 AM
জাতি হারাল এক মহান অভিভাবক: প্রফেসর ইউনূস

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি একজন মহান অভিভাবককে হারাল। “তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। বেগম খালেদা জিয়া কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রীই ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।”

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, অবদান এবং জনগণের সঙ্গে তার আবেগী সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসেই তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্মরণীয় ভূমিকা

শোকবার্তায় প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। “তাঁর আপোষহীন নেতৃত্ব গণতন্ত্রহীন পরিস্থিতি থেকে জাতিকে বারবার মুক্তির প্রেরণা দিয়েছে। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।”

রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব এবং দৃঢ় মনোবল সব সময় পথনির্দেশনা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “তার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাষ্ট্রনায়ককে হারাল।”

স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী

প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করেন, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে একজন গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে নেমে তার দৃঢ় ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ নয় বছরের দুঃশাসনের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বহু সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ দেশকে বহু ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়েছে। মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করা বাংলাদেশের নারী শিক্ষার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

রাজনৈতিক সাফল্য ও নির্যাতনের ইতিহাস

শোকবার্তায় প্রফেসর ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অত্যন্ত সফল। তিনি কখনো কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনগুলোতে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি আসনেই বিজয়ী হন।

১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি মজবুত ভিত্তি স্থাপন করেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। তার আপোষহীন ভূমিকা দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রামে জাতিকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই তিনি চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন এবং মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় দীর্ঘদিন কারাবাস করতে বাধ্য হন।

সমবেদনা ও শান্ত থাকার আহ্বান

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা তার শোকসন্তপ্ত পরিবার, স্বজন এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির মুহূর্তে তিনি দেশবাসীকে শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “যার যার অবস্থান থেকে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”