
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা চাই না, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড (সামলে নেওয়া) করতে পারব না এ মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটি ব্যালান্সড অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না; যেতে পারব না। সেটি আমরা অ্যাফোর্ড করতে পারব না।’বুধবার রাতে জুলাই সনদ নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।বৈঠকে বক্তব্যে নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়েও কথা বলেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজকে সচিবালয়ে যেসব নিয়ম, বদলি-পদায়নের জন্য আপনি মন্ত্রিপরিষদের একটি কেবিনেট কমিটি করে দিয়েছেন, এটির কোনো চর্চা নেই। এটির কোনো ট্র্যাডিশন (প্রচলন) নেই। এটি কোনো নিয়ম নয়। তারা যা করছে, পদোন্নতি বা নিয়োগ-বদলির মধ্যে, সেটি ওখানে একটি রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আপনি খোঁজ নেবেন। আমরা খুব অসন্তোষ প্রকাশ করছি।’
পতিত স্বৈরাচার ও তাদের দোসর একটি দেশ এই সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে থাকবে বলে সতর্কবার্তা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সুতরাং আমাদের একদম অতিবিপ্লবী হলেও চলবে না। বাস্তবতার নিরিখে আমাদের পদক্ষেপটা নিতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় উপদেষ্টা, আমাদের কন্টিনিয়াস সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটি কন্ডিশনাল (শর্তসাপেক্ষ)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, তবে এটি সীমাহীন নয়। আমরা চাই আপনার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক নির্বাচন– এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি। আপনি দয়া করে এটি অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর সেটি সরকার প্রকাশ করলে মানুষ দেখবে-বুঝবে এবং তার ভিত্তিতে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিয়ে তাদের রায় জানাবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এই গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে হওয়ার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণভোটটা আগে হবে, না পরে হবে– এটি তো ঘটনা একই। এটি তাল ধপ করিয়া পড়িল, না পড়িয়া ধপ করিল– কথা তো একই। এটি হ্যাঁ বলবে অথবা না বলবে। এখন যদি একই দিনে একটা ছোট্ট ব্যালটে গণভোট হয়, সেটি আমাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং আলাদা ব্যয়বহুল হবে না। আলাদা ম্যানপাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হবে না। আলাদা নির্বাচনী বাক্স হবে না।’
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা আগে গণভোট চাইছে, সেটি অবশ্য তাদের অধিকার আছে। কিন্তু এটি কতটা যৌক্তিক, আপনারা সবাই একটু চিন্তা করে দেখবেন এবং আমরা মনে করি, সেটি নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি প্রয়াসও হয়তো বা হতে পারে।’