
"বিভাজন নয়, ঐক্যের রাজনীতি গড়ে তুলতে চাই"—এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক সদস্য বিএনপিতে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে অনেক বিভাজন হয়েছে, অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন সময় এসেছে ঐক্যের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার।”
বক্তব্যে তিনি বিগত ১৫ বছরের শাসনকে "ফ্যাসিস্ট শাসন" উল্লেখ করে বলেন, “এই শাসন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে ভালোবাসা ও ঐক্যের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ গড়তে চাই।”
শাপলা ফুটবে, বিভাজন নয়
মির্জা ফখরুল বলেন, “শতফুল ফুটবে—সেই শতফুলের বাগান থেকেই আমাদের জাতীয়তাবাদের স্লোগান উঠে আসবে। আমরা আর প্রতিহিংসার রাজনীতি চাই না।” তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় দলটি "ভালোবাসার রাজনীতি"তে বিশ্বাস করে এবং সবাইকে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যেতে চায়।
বিএনপিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের যোগদান
অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি বিএনপিতে যোগ দেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সোমনাথ দে, কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল এবং সমেন সাহা। ফুল দিয়ে বিএনপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আসুন, আমরা আমাদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি।”
তিনি আরও বলেন, “বাইরের কিছু শক্তি, কিছু দেশ এবং কিছু মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়েছে। আমরা সেটি পাল্টে দিতে চাই। আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা দুর্গাপূজার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে, পূজার আনন্দ ভাগ করে নিয়েছে।”
‘২৪ সালের অভ্যুত্থান এবং ঐক্যের আহ্বান
বিএনপি মহাসচিব স্মরণ করিয়ে দেন, “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানেও ঐক্য তৈরি হয়েছে। কিছু গোষ্ঠী সেই ঐক্যে ভাঙন ধরাতে চায়। আমরা তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সবার—হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আদিবাসীসহ সব সম্প্রদায়ের। সবাই যেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সমান সুযোগ পায়, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে দেওয়া ৩১ দফা কর্মসূচিতেও এসব বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।”
সরকার ও প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা দেখতে চাই না, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। দয়া করে তাদের নিরাপত্তা দিন, আমরা শক্তভাবে তাদের পাশে থাকব।”
বড় সমাবেশের প্রস্তুতি
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কপিল ও সোমনাথ বাবুর নেতৃত্বে শিগগিরই একটি বৃহত্তর সমাবেশের আয়োজন করা হবে, যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার এবং রমেন বাবু।