ঢাকা, শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫,
সময়: ১১:০০:৪২ PM

ফরিদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২৫

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
07-11-2025 08:07:18 PM
ফরিদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২৫

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ নেতাদের সঙ্গে জেলা বিএনপির শীর্ষ  নেতার পছন্দের গ্রুপের নানা ধরনের হয়রানি ও বিরোধের জেরেই এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা সদরের ওয়াবদা মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পাশাপাশি অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং আশপাশের ১০ থেকে ১২টি দোকানেও ভাঙচুর চালানো হয়।

প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন—উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনাজুর রহমান লিপন, লিয়াকত মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, টিটু, জব্বার, ইমদাদুল হক, লাভলুসহ প্রায় ২৫ জন। আহতদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজনৈতিক বিরোধ থেকেই সংঘর্ষ

স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়।

বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দুই পক্ষই পৃথক র‍্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করে। ঝুনু গ্রুপ ওয়াবদা মোড়ের হারুন শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত উপজেলা বিএনপির একাংশের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে, অন্যদিকে নাসিরুল ইসলাম গ্রুপ চৌরাস্তা এলাকায় একই কর্মসূচি আয়োজন করে।

বিকেলে দুই পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী বোয়ালমারী বাজার এলাকায় জড়ো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নাসিরুল ইসলামপন্থীরা লাঠিসোঁটা, ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝুনু সমর্থকদের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে আশপাশের দোকান ও মোটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে এই ধ্বংসযজ্ঞ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে গেলে বিক্ষুব্ধরা বাধা দেয়, ফলে তারা ফিরে আসে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু অভিযোগ করে বলেন, “নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা বহিরাগত লোক এনে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং অফিসে ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।”

অন্যদিকে, উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ঝুনু মিয়ার সমর্থকরা উসকানি দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়াটে লোক এনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে।”

চিকিৎসা ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ আল মাসুম জানান, আহত সাতজনকে হাসপাতালে আনা হয়, যার মধ্যে তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসায় কাজ চলছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “এ ধরনের সহিংসতা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করিনি পরিস্থিতি এতটা অস্থিতিশীল হবে।”