কাদিয়ানি (আহমদিয়া) সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণার দাবিতে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন’ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসম্মেলনে সম্মিলিত খতমে নবুয়ত পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়িত না হলে আরও ‘কঠিন থেকে কঠিনতর’ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী, কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে তিন ধাপে কর্মসূচি পালন করা হবে—
১) গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণে সারাদেশে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হবে।
২) স্মারকলিপি প্রদান
আগামী মে ও জুন মাসজুড়ে দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হবে।
৩) বিভাগীয় মহাসম্মেলন
আগামী জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী জানান, এসব শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পরও যদি সরকার কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণার দাবি বাস্তবায়ন না করে, তবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিনিধিত্বশীল শীর্ষ ওলামাদের অংশগ্রহণে জাতীয় ওলামা সম্মেলন ডাকা হবে, যেখানে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সম্মেলনের ৬ দফা ঘোষণা
ইসলামের মৌলিক আকিদা ‘খতমে নবুয়ত’ রক্ষা ও কাদিয়ানিদের ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ ঘোষণার দাবিতে সম্মেলনে দেশ-বিদেশের শীর্ষ ওলামারা সর্বসম্মতভাবে ছয় দফা দাবি সম্বলিত একটি ঘোষণাপত্র গৃহীত করেন। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন খতমে নবুয়াত পরিষদের মাওলানা মাহফুজুল হক।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, খতমে নবুয়ত অস্বীকার করার কারণে কাদিয়ানিরা মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত মত অনুযায়ী ইসলাম বহির্ভূত বলে বিবেচিত। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে তাদের অমুসলিম সংখ্যালঘু হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজন।
ছয় দফায় উল্লেখ করা হয়—
-
অমুসলিম ঘোষণা
আহমদিয়া মুসলিম জামাত পরিচয়ে পরিচিত কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে ইসলাম অনুযায়ী অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। তারা ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ নাম ব্যবহার করতে পারবে না; বরং ‘কাদিয়ানি সম্প্রদায়’ হিসেবে পরিচিত হবে। -
ইসলামী পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
কাদিয়ানিরা তাদের ধর্মকে ইসলাম নামে পরিচয় দিতে পারবে না এবং কালিমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, আজান, ঈদ, কোরবানির মতো ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার করতে পারবে না। -
উপাসনালয় ও নিদর্শন
তারা তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ নামে ডাকতে পারবে না; বরং তা ‘কাদিয়ানি উপাসনালয়’ নামে পরিচিত হবে। সাহাবি বা উম্মুল মুমিনিনের মতো ইসলামী বিশেষ উপাধিও ব্যবহার করতে পারবে না। -
বিবাহ সম্পর্ক
মুসলমানের সঙ্গে কাদিয়ানির বিবাহ ইসলামে হারাম। পরিচয় গোপন করে বিবাহ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। -
জানাজা ও উত্তরাধিকার
কাদিয়ানিদের জানাজা পড়া যাবে না এবং মুসলমানদের কবরস্থানে তাদের দাফন করা যাবে না। মুসলমান ও কাদিয়ানির মধ্যে উত্তরাধিকার প্রযোজ্য হবে না। -
প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা
ইসলাম প্রচারের নামে কোরআনের বিকৃত অনুবাদ বা কোনো বই-পুস্তিকা, লিফলেট ছাপানো বা প্রচার করা যাবে না।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষণ ও শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলো নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থাগুলো কাদিয়ানি মতবাদকে ইসলামবিরোধী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সম্মেলন থেকে মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়— এই সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে নামাজ না পড়া, বিবাহসंबন্ধ না করা, সালাম বিনিময় থেকে বিরত থাকা এবং তাদের পণ্য বর্জন করার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য।
নেতৃবৃন্দ জানান, খতমে নবুয়ত ঈমানের মূল ভিত্তি—এই বিশ্বাসে শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক পথেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ বা সহিংসতার বিরোধিতা করবেন।