ঢাকা, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ১২:৫৫:০৭ PM

খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া-সমর্থনের জোয়ার

ষ্টাফ রিপোটার।। দৈনিক সমবাংলা
03-12-2025 08:09:07 PM
খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া-সমর্থনের জোয়ার

বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন শুধু দলীয় নেত্রী নন, বহু মানুষের কাছে তিনি পরিণত হয়েছেন জাতীয় নেত্রীতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান, পেশাজীবী, সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া করছেন। অসুস্থ বেগম জিয়ার প্রতি মানুষের এই অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং সর্বস্তরের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাজনীতিতে দীর্ঘ পাঁচ দশকের ভূমিকা, তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং সংকটের মুহূর্তে দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদানের কারণে খালেদা জিয়া আজও কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক। তাঁর চিকিৎসা নিয়ে সাম্প্রতিক উদ্বেগ ও আলোচনার প্রেক্ষাপটে সরকারিভাবে ভিভিআইপি মর্যাদা প্রদান, এসএসএফ নিয়োগ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গনের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেওয়া প্রমাণ করে—তাকে একজন জাতীয় নেত্রী হিসেবেই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা, বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন এবং দেশের বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণির মানুষ বেগম জিয়ার আরোগ্য কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়েছেন। শুধু রাজনৈতিক দল নয়,মানবিক বিবেচনাতেও তাঁকে ঘিরে যে আবেগীয় সংহতি তৈরি হয়েছে, তা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বেগম জিয়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বহুবার নির্যাতন, হয়রানি ও কারাবরণের মুখোমুখি হয়েছেন। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই দেশই তাঁর শেষ ঠিকানা—তিনি কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন না। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা কালে অনেক রাজনৈতিক নেতার বিদেশে আশ্রয় নেওয়া বা দেশত্যাগের উদাহরণের বিপরীতে তাঁর দৃঢ় অবস্থান জনগণের কাছে সম্মান অর্জন করেছে। যে কারণে আজ তাঁর প্রতি কোটি মানুষের ভালোবাসা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চেয়ে হাজারো পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যথা, উদ্বেগ ও শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করছেন নানাভাবে। অনেকে তাঁকে দেশের "মা" বা " জাতীয় অভিভাবক" হিসেবেও উল্লেখ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একজন নেতার অসুস্থতা নিয়ে এভাবে সমগ্র জাতির সাড়া পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম জিয়া এক ক্ষণজন্মা নারী। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—তিনটি ক্ষেত্রে তাঁর সংগ্রামী যাত্রা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া দল বিএনপিকে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। মাওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো শীর্ষ নেতাদের পরবর্তীতে তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজের স্থান করে নিয়েছেন। গৃহিণী থেকে রাষ্ট্রনায়ক—এই পথচলা একদিকে যেমন সংগ্রামমুখর, অন্যদিকে তেমনি অনন্য অর্জনে ভরপুর। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে যুগান্তকারী অবদান রেখেছেন। শিক্ষা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, সরকারি বেতন কাঠামো, সিটি করপোরেশন ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ নানা সংস্কারের কারণে এখনো অনেকেই তাঁর শাসনামলকে স্থিতিশীলতার সময় হিসেবে স্মরণ করেন। বর্তমানে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা দেশের রাজনীতির গতিপথে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাঁর চিকিৎসা, মানবিক বিবেচনা, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ—সব কিছু মিলিয়ে জাতির দৃষ্টি এখন তাঁর দিকে নিবদ্ধ। একদিকে রাজনৈতিক ইতিহাস, অন্যদিকে মানুষের অনুভূতিশীল ভালোবাসা—এই দুইয়ের সংমিশ্রণে খালেদা জিয়া আজ শুধু বিএনপির নেতা নন, বরং দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।