ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫,
সময়: ০৮:৪৩:০১ AM

তারেক রহমান:প্রবাসেও দৃঢ় নেতৃত্ব,মানবিক রাজনীতির প্রতিচ্ছবি

মান্নান মারুফ
22-12-2025 08:52:15 PM
তারেক রহমান:প্রবাসেও দৃঢ় নেতৃত্ব,মানবিক রাজনীতির প্রতিচ্ছবি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিযাত্রায় নিজেকে একজন পরিণত, দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। দলীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে বিএনপির বর্ষীয়ান নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে নবীন ও তরুণ প্রজন্ম—সবার কাছেই তিনি একজন গ্রহণযোগ্য ও আস্থাভাজন নেতৃত্বের প্রতীক। রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, দীর্ঘ প্রবাসজীবন এবং নানা বাস্তব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখা এবং মানবিক রাজনীতির ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমে তিনি তার নেতৃত্বের সক্ষমতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন।

তারেক রহমান কেবল একজন রাজনীতিবিদ নন; তিনি একজন মানবিক মানুষ হিসেবেও সুপরিচিত। গরিব, অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম মূল ভিত্তি। দেশে সরাসরি উপস্থিত না থেকেও তিনি তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চিকিৎসা সহায়তা, আর্থিক সহযোগিতা কিংবা দুর্যোগকালীন ত্রাণ কার্যক্রম—সব ক্ষেত্রেই তার ভূমিকা সাধারণ মানুষের কাছে তাকে আরও কাছের মানুষ করে তুলেছে।

দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাসজীবন শেষে তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডা, জনপরিসর কিংবা টেলিভিশনের টকশো—দীর্ঘদিন ধরে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছিল, তা হলো: তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, কেন এতদিন আসেননি, দেশে ফিরতে তার বাধা কোথায়? সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যাচ্ছে তার প্রত্যাবর্তন। দলীয় সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, তিনি দেশে ফিরছেন।

তার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রস্তুতিতে। দলের শীর্ষ নেতাকে কীভাবে সংবর্ধনা জানানো হবে—তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আয়োজন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে রাজধানীর খিলক্ষেতের ৩০০ ফিট এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, দলনেতাকে সর্বোচ্চ সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে বরণ করে নেওয়া হবে। পাশাপাশি তার জন্য রাজধানীতে আবাসনের ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

তারেক রহমান নিজেই লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং সেখানে উপস্থিত দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নেন। তিনি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানান, তাকে বিদায় জানাতে যেন কেউ বিমানবন্দরে না যান—যা তার ব্যক্তিত্বের সংযত ও মার্জিত দিকটি স্পষ্ট করে। জানা গেছে, তিনি স্ত্রী ও কন্যাসহ আরও পাঁচজন সফরসঙ্গী নিয়ে দেশে ফিরছেন। এমনকি তার প্রিয় পোষা বিড়াল ‘জেবু’ও তার সঙ্গে থাকছে, যা তার ব্যক্তিগত জীবনের মানবিক ও পারিবারিক আবহ তুলে ধরে।

বাংলাদেশ বিমানের বিজি–২০২০ ফ্লাইটে তার টিকিট বুকিং করা হয়েছে। ফ্লাইটটি ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং বোয়িং ৭৮৭–৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা নতুন নয়। গত ২৩ নভেম্বর থেকে তার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কেন তারেক রহমান তখনও দেশে আসছেন না—এ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেউ কেউ বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তার দেশে ফেরার সুযোগ ছিল। এসব প্রশ্নের জবাব পরে নিজেই স্পষ্ট করেন তারেক রহমান। তিনি জানান, আইনি ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণেই এতদিন তার দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি।

সচেতন নাগরিকদের অনেকের মতে, দীর্ঘ প্রবাসজীবন তারেক রহমানকে আরও পরিশীলিত, ধৈর্যশীল ও কৌশলী নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে। প্রবাসে থেকেও তিনি দলের ভেতরে ঐক্য বজায় রেখেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং দলকে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় রেখেছেন—যা একজন দক্ষ রাজনৈতিক সংগঠকের পরিচায়ক।

ওয়ান-ইলেভেন–পরবর্তী রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তারেক রহমান সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান। ২০১২ সালে তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন, যা এক বছরের মধ্যেই অনুমোদিত হয়। এরপর থেকেই তিনি প্রবাসে অবস্থান করছেন। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান প্রয়োজনে কয়েকবার দেশে এলেও তারেক রহমানের দেশে ফেরা দীর্ঘদিন সম্ভব হয়নি।

সব প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারেক রহমান রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেননি। বরং প্রবাস থেকেই তিনি দলের হাল ধরেছেন, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছেন এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তন বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি ও সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে নেতাকর্মীরা আশাবাদী।

সব মিলিয়ে বলা যায়, তারেক রহমান একজন সময়োপযোগী ও মানবিক রাজনীতিবিদ—যিনি সংকটে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সহমর্মিতার রাজনীতি চর্চা করেছেন এবং সময়ের সঙ্গে নিজেকে আরও পরিণত করেছেন। তার দেশে ফেরা কেবল একজন নেতার প্রত্যাবর্তন নয়; বরং বিএনপির রাজনৈতিক যাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবেই দেখছেন অনেকে।