বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি কখনো পরাজয়ের মুখ দেখেননি। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন তিনি।
১৯৯১: পাঁচ আসনে ঐতিহাসিক জয়
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া একযোগে পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলোতেই বিজয়ী হন। আসনগুলো হলো—
বগুড়া-৭, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ফেনী-১ ও চট্টগ্রাম-৮।
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৯৬: ফেনী-১ থেকে বিজয়
১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ফেনী-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ (সপ্তম সংসদ): আবারও পাঁচ আসনে জয়
একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ফের পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেন। আসনগুলো হলো—
বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, ফেনী-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও চট্টগ্রাম-১।
২০০১: অষ্টম সংসদেও নিরঙ্কুশ সাফল্য
২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও পাঁচটি আসনে জয়ী হন। সেগুলো হলো—
বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, ফেনী-১ ও লক্ষ্মীপুর-২।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০৮: তিন আসনে জয়
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং তিনটিতেই বিজয় অর্জন করেন। আসনগুলো হলো—
বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১।
জীবনের অবসান
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
ত্যাগ ও সংগ্রামের মহাকাব্য
একসময়ের লাজুক গৃহবধূ সময়ের প্রয়োজনে পরিণত হয়েছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রীতে। স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্ব গ্রহণ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব, এক–এগারোর ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং টানা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য—বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ছিল ত্যাগ, সংগ্রাম ও অবিচলতার এক মহাকাব্য।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অপরাজেয় রেকর্ড এবং গণতন্ত্রের জন্য নিরন্তর লড়াই তাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।