ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬,
সময়: ০৫:৩৭:২৬ PM

পর্ব ৪: প্রথম দেখা

মান্নান মারুফ
30-12-2025 01:57:14 PM
পর্ব ৪: প্রথম দেখা

শীতের সকালে নীলা একা বসে আছে নদীর ধারে।
পাহাড়ের নীচে ছোট্ট কফি শপের জানালা খুলে আছে।
চায়ের কাপ হাতে, চোখে অদ্ভুত এক নীরবতা।
ভেতরে সে ভাবছে—প্রতিটি ভালোবাসার গল্পে কি না কি রকমের ব্যথা থাকে।

রবি পাশে বসে আছে, চুপচাপ।
কেউ কিছু বলছে না।
শব্দের বাইরে বোঝাপড়া।
এই নীরবতা, যা প্রথম দেখা থেকেই তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, আজ আরও গভীর।

রবি চোখে অতীতের ছায়া দেখে।
একসময় সে খুব কাছ থেকে ভালোবাসতে চেয়েছিল।
প্রতিটি সম্পর্ককে নিজের করে নিতে চেয়েছিল, স্পর্শ করে বন্ধনে বাঁধতে চেয়েছিল।
কিন্তু শিখেছে—যদি অতিপ্রিয় কোনো কিছু খুব কাছে আনা হয়, তা ভেঙে যায়।
ভালোবাসা চাপে, দাবীতে, স্পর্শে ক্ষয়ে যায়।

নীলাও জানে ক্ষয়ের গল্প।
একসময় তার ভালোবাসা দখলে পরিণত হয়েছিল।
প্রশ্ন, সন্দেহ, অধিকার—সব মিলিয়ে ভালোবাসা হয়ে উঠেছিল শ্বাসরোধ।
তারপর শিখেছে—ছোঁয়া মানেই নয়, দূরত্ব মানেই ভালোবাসা বাঁচানো।

আজ রবি ও নীলা সেই শিখনকে জীবন করেছে।
তারা একে অপরকে কখনো চাপিয়ে ধরে না।
হাত বাড়ায়, কিন্তু ছোঁয় না।
কাঁধ লাগায়, কিন্তু সীমারেখা অটুট রাখে।
এই দূরত্বের মধ্যেই তাদের ভালোবাসা অমর।

নীলা হেসে বলল,
—“তুমি কি কখনো ভাবো, আমরা যদি খুব কাছাকাছি থাকতাম, কী হত?”
রবি ধীরে বলল,
—“হয়তো মুহূর্তের সৌন্দর্য নষ্ট হত। আমরা যত দূরে, তত সুন্দর।”

শীতল বাতাসে তাদের কথা ভেসে যায়।
দূরের পাহাড়ের ছায়া, নদীর ধারে হালকা ঢেউ—সব মিলিয়ে অনুভূতির গভীরতা।
শব্দের প্রয়োজন নেই।
দূরত্বে থাকা মানেই স্পর্শহীন মিলন।

রবির চোখে অতীতের আরেকটি স্মৃতি—একটি ব্যথার স্মৃতি।
একজন প্রিয় মানুষকে খুব কাছে আনতে চেয়েছিল, কিন্তু ভালোবাসা ভেঙে গিয়েছিল।
নীলার চোখে অতীতের আরেকটি দুঃখ—এক সময় ভালোবাসা শ্বাসরোধ হয়ে গিয়েছিল।
তাদের দু’জনই জানে—যদি খুব কাছাকাছি থাকত, মুহূর্ত নষ্ট হত।

তাদের নীরব আড্ডা, চোখের খেলা, দূরত্ব—সবই সেই শিক্ষার ফল।
দূরত্ব মানেই স্বাধীনতা।
দূরত্ব মানেই ভালোবাসা ধ্বংস হয় না।
দূরত্ব মানেই সংযোগ স্থায়ী।

নদীর ধারে বসে তারা চুপচাপ।
চায়ের কাপ হাতে, চোখে অদ্ভুত প্রশান্তি।
রবি হঠাৎ বলে,
—“দূরত্বের মধ্যে সব কিছু পরিষ্কার। ভালোবাসা চাপের বাইরে থাকে। স্পর্শ না করেও অনুভূতি অটুট থাকে।”
নীলা হেসে মাথা নেড়ে বোঝালো—“হ্যাঁ, এটাই আমাদের গল্প।”

প্রতিটি স্মৃতি, প্রতিটি ব্যথা, প্রতিটি সুখ—সব মিলিয়ে এই সম্পর্কের ভিত্তি।
তারা জানে, ভালোবাসা কখনো দাবি করে না।
শুধু পাশে থাকা যথেষ্ট।
শুধু বোঝা যথেষ্ট।
দূরত্ব তাদের মিলনের ভাষা।

রাত্রে পাহাড় থেকে ফিরে, তারা ছোট্ট কফি শপের বারান্দায় বসে।
নীলা বলে,
—“আমরা কি কখনো খুব কাছাকাছি থাকব না?”
রবি হেসে উত্তর দেয়,
—“যদি খুব কাছে থাকি, মুহূর্ত নষ্ট হবে। দূরত্বেই সম্পূর্ণতা।”

শীতল বাতাসে চুপচাপ বসে আছে তারা।
কেউ কিছু বলছে না।
শুধু চোখে চোখ।
শুধু নীরব স্পর্শহীন মিলন।

রাত্রি নেমে আসে।
শহরের আলো ধীরে ধীরে জ্বলে।
কফি শপের জানালা বন্ধ হয়।
তবু দু’জনের মধ্যে সংযোগ অটুট।
দূরত্ব, নীরবতা, চোখের খেলা—সব মিলিয়ে তাদের ভালোবাসা চিরস্থায়ী।

নীলাকে হঠাৎ মনে পড়ে অতীতের সব দুঃখ।
রবিরও মনে পড়ে হারানো মুহূর্ত।
তাদের শিক্ষা—অতিপ্রিয় কিছু খুব কাছে আনা যায় না।
যদি আনা হয়, ভালোবাসা ক্ষয়ে যায়।
শুধু পাশে থাকা, দূরে থাকা—এই নীরবতা যথেষ্ট।

রাতের নীরবতায় নদীর ঢেউ বাজে।
নীলা ধীরে হেসে বলে,
—“আমাদের ভালোবাসা সম্ভবত সবচেয়ে নিরাপদ এখানেই—দূরে, স্পর্শহীন।”
রবি চোখে হাসি, ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বোঝায়—“হ্যাঁ, ঠিক তাই।”

এই মুহূর্তে তারা বুঝল—দূরত্বই তাদের মিলনের প্রকৃত অনুভূতি।
দূরত্বই তাদের ভালোবাসাকে চিরস্থায়ী করে।
স্পর্শ না করা, দাবি না করা, শুধু পাশে থাকা—এই নীরবতা তাদের একে অপরের হৃদয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে।

পাহাড়ের যাত্রা শিখিয়েছে—দূরত্ব মানেই ক্ষয় নয়, বরং ভালোবাসার পূর্ণতা।
নদীর ঢেউ, পাহাড়ের ছায়া, বাতাসের নীরবতা—সব মিলিয়ে অনুভূতির গভীরতা।
শব্দে নয়, স্পর্শে নয়, তবু বোঝা যায়।
দূরত্বই তাদের ভালোবাসার সুর, চোখের খেলা, হৃদয়ের টান।

রাত্রে তারা আলাদা ঘরে ঘুমায়।
চুপচাপ।
তবু মন ভরে আছে অনুভূতি দিয়ে।
হৃদয়ের অদৃশ্য সংযোগ, দূরত্বের মধ্যে মিলন—সব মিলিয়ে নীরব ভালোবাসা চিরস্থায়ী।