ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬,
সময়: ০৩:৪৮:২৮ PM

পর্ব ২:প্রথম দেখা

মান্নান মারুফ
30-12-2025 01:45:55 PM
পর্ব ২:প্রথম দেখা

ধীরে ধীরে কথোপকথন।
নদীর ধারে ছোট্ট কফি শপে বসে তারা চায়ের কাপ হাতে আড্ডা দিচ্ছিল।
শব্দের মাধ্যমে নয়, চোখের খেলা, হালকা হাসি, হাতের নড়াচড়া—সব মিলিয়ে বোঝাপড়ার নিঃশব্দ ভাষা তৈরি হয়েছিল।
কেউ কখনো জিজ্ঞেস করত না—“তুমি আমার জন্য কী করছ?”
কারণ তারা জানত, ভালোবাসা দাবীতে ক্ষয়ে যায়।
প্রতিটি ছোট কাজ, প্রতিটি খোঁজখবর, প্রতিটি হাসি—সবই নিঃশব্দে প্রকাশ পেত।

নীরবতার মধ্যেই তাদের প্রথম শক্তি।
রবি চুপচাপ বসে থাকে, কাপ ধরে, নীরবতায় নিঃশ্বাস ফেলে।
নীলা এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতে বই ধরে বসে থাকে।
কেউ কাউকে ডাকছে না, কেউ সামনে এগোচ্ছে না।
তবু হৃদয় একে অপরের দিকে টানে।
অদৃশ্য এই টান যেন চোখে পড়ছে না, কিন্তু অনুভূত হচ্ছে।

স্পর্শের নিয়ম ছিল অদ্ভুত।
কোনো হাত ছোঁয়া নয়, কাঁধে কাঁধ লাগানো নয়।
যদি কেউ স্পর্শ করার চেষ্টা করে, অদৃশ্য বাধা তৈরি হয়।
দূরত্ব তাদের ভালোবাসার একটি শর্ত।
এই দূরত্ব, যা অনেকের চোখে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, তাদের হৃদয়কে বাঁচিয়ে রাখে।
প্রথম দেখা থেকে এই নীরব নিয়ম শুরু হয়েছিল।
একটু কাছ, একটু দূরে—ঠিক ততটুকুই।

বন্ধুরা বিভ্রান্ত হয়।
কেউ হেসে বলে,
—“এত ভালোবাসা, অথচ এত দূরে?”
কেউ ভাবতে থাকে, কীভাবে এত নীরবতা সম্ভব।
কেউ হয়তো বুঝতে পারে না—দূরত্বই আসলে তাদের মিলনের ভাষা।
নীলা হেসে উত্তর দেয় না।
রবি চুপ করে থাকে, চোখে বোঝায় যা শব্দে বলা যায় না।

নদীর ধারে বাতাসের হালকা ছোঁয়া।
শীতল বাতাসে নীলার চুল উড়ছে, রবি শুধু তাকিয়ে আছে।
কফির কাপের দিকে চুমুক নিচ্ছে, চোখে অদ্ভুত শান্তি।
শব্দের বাইরে বোঝার জায়গা।
নীরবতা, দূরত্ব, চোখের খেলা—সব মিলিয়ে এক গভীর সংযোগ।

তাদের আড্ডার সময় ছিল নির্দিষ্ট কোনো সীমা ছাড়াই।
কথা বলার নয়, বোঝার জায়গা ছিল।
নদীর ঢেউয়ের শব্দ, বাতাসে বইয়ের পাতার হালকা ঝাপটানো, চায়ের গরম কাপ—সব কিছু মিলিয়ে মুহূর্তকে স্মরণীয় করে।
কেউ কাউকে ডাকছে না।
কেউ দাবী করছে না।
শুধু বসে আছে, চোখে চোখ রেখে।

নীলা মাঝে মাঝে হেসে বলে,
—“কেমন অদ্ভুত—এত কাছাকাছি, তবু দূরে।”
রবি হেসে উত্তর দেয়,
—“দূরত্বেই তো সুন্দর। ছুঁলে কিছু মারা যায়।”

এই কথায় যেন সব বোঝা যায়।
স্পর্শ না করে বোঝার ক্ষমতা, নিঃশব্দ ভালোবাসা।
নীরবতার মধ্যেই মিলন।
হৃদয়ের গভীরতা স্পষ্ট।
দূরত্ব তাদের ভালোবাসাকে নিখুঁত করে।

একদিন দুপুরে নদীর ধারে আরও কাছাকাছি বসেছিলেন।
নীলা চা খাচ্ছিল, রবি চুপচাপ তাকিয়ে ছিল।
পাশে থাকা, হাত ছোঁয়া না, তবু হৃদয় টানছে।
রবি ধীরে ধীরে বলল,
—“সব কিছু নিজের করে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভালোবাসা ক্ষয়ে যায়। আমরা শুধু বাঁচতে দিচ্ছি।”
নীলা চুপ করে থাকল।
চায়ের কাপ হাতে, চোখে নীরব হাসি।
এই মুহূর্তে তারা বুঝেছিল—দূরত্বই তাদের মিলনের প্রকৃত ভাষা।

নীরব আড্ডা শুধু অনুভূতির নয়, শিক্ষার জায়গাও।
এখানে বোঝা যায়, ভালোবাসা কখনো দাবী করা হয় না, চাপিয়ে ধরা হয় না।
এখানে শিখা যায়, কাছাকাছি থাকা মানেই ধ্বংস নয়, ছোঁয়াহীনও গভীর হতে পারে।
এই আড্ডার সময় একে অপরের নিঃশব্দ বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

বন্ধুরা মাঝে মাঝে হাজির হয়, হেসে বলে—“এত ভালোবাসা, অথচ দূরে!”
নীলা শুধু হেসে তাকায়, রবি চুপ করে থাকে।
তাদের নীরবতা সেই বিভ্রান্তির উত্তর।
যে ভালোবাসা স্পর্শে নয়, শব্দে নয়, তবু হৃদয়ে গেঁথে আছে।

বাইরে বিকেলের আলো ঢুকে পড়ে।
নদীর পানি হালকা ঢেউ খেলাচ্ছে।
তাদের চোখে চোখ পড়ছে, কেবল অনুভূতি।
কোনো হাত না, কোনো শব্দ না।
তবু বোঝা যাচ্ছে—দূরত্বের মধ্যে মিলন।
দূরত্বই তাদের ভালোবাসার মূল ভাষা।

এই নীরবতা শুধু মুহূর্তের নয়, ভবিষ্যতেরও।
এটি সংযোগের সৌন্দর্য।
এটি শিখিয়ে দেয়—ভালোবাসা কখনো চাপিয়ে ধরা যায় না।
শুধু পাশে থাকা যথেষ্ট।
শুধু চোখে চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা যথেষ্ট।
দূরত্বই তাদের মিলনের সম্পূর্ণতা।

সন্ধ্যার আলো নেমে আসে।
নদীর পাশে আড্ডা শেষ।
চায়ের কাপ শেষ, কথা শেষ।
তবু মন ভরে আছে অনুভূতি দিয়ে।
রাস্তায় আলাদা পথে হেঁটে চলে গেল।
দূরত্ব বজায় আছে, তবু সংযোগ অমর।

এই নীরব আড্ডা—চায়ের কাপ, নদীর ধারা, চোখের খেলা, দূরত্বের নিয়ম—সব মিলিয়ে তাদের ভালোবাসাকে নিখুঁত করেছে।
স্পর্শ নয়, শব্দ নয়, তবু বোঝা যায় গভীর মিলন।
দূরত্বই তাদের গল্পের মূল সুর।
নীরবতা, আড্ডা, চোখের খেলা—এই তিনটি তাদের সম্পর্ককে চিরস্থায়ী করে দিয়েছে।