ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬,
সময়: ০৫:৪১:১০ PM

পর্ব ৩: প্রথম দেখা

মান্নান মারুফ
30-12-2025 01:53:19 PM
পর্ব ৩: প্রথম দেখা

সকালের হালকা সোনালী আলো পাহাড়ের শীর্ষে পড়ছে।
নীলা আর রবি হাঁটছে পাহাড়ি পথে, দু’জনই কাঁধে ব্যাগ, হাতে ছোট্ট জার্নাল।
হাওয়ায় শীতল ছোঁয়া, গাছের পাতা নড়াচড়া করছে, পাখির ডাক ভেসে আসছে।
তাদের মধ্যে দূরত্ব—ঠিক ততটুকু, যা কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও স্পর্শকে বিলুপ্ত করে।

রবি হাঁটছে পাশে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া সম্ভব।
কিন্তু স্পর্শ হয় না।
নীলা চুল সরাতে চেষ্টায় হাত টানল, রবি ধীরে তাকাল।
কোনো কথা নেই।
শুধু এক অদৃশ্য সীমারেখা, যা তাদের ভালোবাসার সুরকে অটুট রাখে।

পাহাড়ের পথ নীরব, শুধু নদীর ছোট্ট স্রোত, পাথরের উপর হালকা ধাপের শব্দ।
নীলা থেমে দাঁড়াল।
—“আকাশটা কত কাছে মনে হচ্ছে, তাই না?”
রবি মাথা নেড়ে উত্তর দিল,
—“কিন্তু ছোঁয়া যাচ্ছে না বলেই সুন্দর।”

নীলার চোখে হেসে ওঠা শান্তি।
রবির চোখে—এক ধরনের নীরব প্রশান্তি।
কেন এই নীরব প্রশান্তি এত গভীর—না বোঝা গেল, না বলা গেল।
তাদের ভালোবাসা এত কাছাকাছি, তবু স্পর্শহীন।

পাহাড়ের বুকে বসে তারা জল খাচ্ছে।
চায়ের কাপ নেই, শুধু পাহাড়ের ঠান্ডা বাতাসে মুখ ভেজানো।
নীলা হেসে রুবির দিকে তাকাল।
রবি চুপ করে মাথা নেড়ে বোঝালো—সব ঠিক আছে।
শব্দের প্রয়োজন নেই।
দূরত্বই তাদের অনুভূতির ভাষা।

রাস্তায় হেঁটে হেঁটে তারা পাহাড়ের এক অজানা শীর্ষে পৌঁছালো।
নীলা হাত দিয়ে একটি পাথর ছুঁতে চাইল।
রবি ধীরে এগিয়ে গেল, হাত বাড়াল—তবু ছোঁয়া হয়নি।
এ মুহূর্তে তারা বুঝল—ছোঁয়া না করলেও অনুভূতি স্পষ্ট।
দূরত্বই তাদের মিলনের প্রকৃত অনুভূতি।

রাতের আকাশ ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হল।
নক্ষত্র ঝলমল করছে, চাঁদ উঁচু।
নীলা হালকা সিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রবি পাশে, কয়েক পা দূরে।
একবার হাত বাড়ালেও স্পর্শ হবে না—তবু হৃদয়ের সংযোগ অটুট।

নীলা বলে,
—“এই নক্ষত্রগুলো ঠিক আমাদের মতো।”
রবি হাসল,
—“দূরত্বে থাকলেই সব সুন্দর।”

রাত্রি নেমে আসে, হাওয়ায় শীতলতা।
পাহাড়ের উপরে দু’জন, দূরত্ব বজায় রেখে।
কেউ প্রশ্ন করছে না, কেউ দাবি করছে না।
শুধু চোখের খেলা, নিঃশব্দ বোঝাপড়া।
শব্দের বাইরে মিলন।

রাত্রে তাঁরা আলাদা আলাদা ত্রিপলেই ঘুমায়।
নীলা চোখ বন্ধ করে পাহাড়ের বাতাসের মধ্যে অনুভব করে—রবি খুব কাছেই আছে, তবে ভেতরে ঢুকে পড়েনি।
রবি জানে—যদি স্পর্শ করত, মুহূর্তের সুন্দরতা নষ্ট হত।
দূরত্বই তাদের ভালোবাসার সৌন্দর্য।

পরের দিন সকাল।
সাদা মেঘের আড়ালে সূর্য উদিত।
নীলা আর রবি নদীর ধারে বসে আছে।
পাহাড়ের ছায়া, নীরব বাতাস, নদীর ঢেউ—সব মিলিয়ে অনুভূতি আরও গভীর।
রবি চুপচাপ দেখছে নীলাকে, নীলা হেসে তাকাচ্ছে।
কোনো হাত না, কোনো শব্দ না, তবু বোঝা যাচ্ছে—হৃদয়ে মিলন।

পাহাড় থেকে নামার পথে, নীলা হঠাৎ বলে,
—“কেন আমরা কখনো খুব কাছে থাকি না?”
রবি ধীরে উত্তর দেয়,
—“যদি খুব কাছে থাকতাম, মুহূর্তের সৌন্দর্য চলে যেত। দূরত্বই আমাদের ভালোবাসার পরিপূর্ণতা।”

নীলা হেসে মাথা নেড়ে বোঝালো।
দূরত্বে থাকা মানেই স্পর্শহীন মিলন।
এই শিখন তাদের ভালোবাসাকে দীর্ঘস্থায়ী করে।

পাহাড়ের প্রতিটি ধাপ, নদীর প্রতিটি ঢেউ, বাতাসের প্রতিটি স্পর্শ—সব মিলিয়ে নীরব ভালোবাসার গল্প।
স্পর্শ না করেও মিলন, শব্দ না করেও বোঝাপড়া।
এই নীরবতা, এই দূরত্ব, পাহাড়ের নীরব আলো—সব মিলিয়ে তাদের সম্পর্ককে গভীর করে।

রাত্রে, শহরে ফেরার পথে, তারা একে অপরের দিকে তাকায়।
দূরত্ব আছে, তবু সংযোগ অটুট।
হৃদয়ের টান অদৃশ্য, কিন্তু স্পষ্ট।
দূরত্ব, নীরবতা, চোখের খেলা—সব মিলিয়ে তাদের গল্পকে চিরস্থায়ী করে।

এই পাহাড়ের যাত্রা শিখিয়েছে—দূরত্ব মানেই ক্ষয় নয়, বরং ভালোবাসার পূর্ণতা।
স্পর্শ না করেও অনুভব করা যায়, শব্দ না বলেও বোঝা যায়।
নীরবতার মধ্যেই মিলনের সৌন্দর্য, চোখের খেলা, হৃদয়ের টান।
দূরত্বই তাদের ভালোবাসার মূল সুর।
পাহাড়, নদী, নক্ষত্র—সবই তাদের মিলনের সাক্ষী।